রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

১৮ মেয়াদে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ১৭ জন

আমার সুরমা ডটকমস্বাধীনতার ৪৭ বছরে সেনাপ্রধান হিসেবে ১৮ মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন মোট ১৭ জন। এদের মধ্যে একজন দুইবার এই পদে আসীন হয়েছেন।

এই ৪৭ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় সেনাপ্রধান ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর সবচেয়ে কম সময়ের জন্য ছিলেন খালেদ মোশাররফ।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধানদের মধ্যে দুই জন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন এবং পরে দলও গঠন করেছেন। সংসদ সদস্যও হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।

আর এই ১৭ জনের মধ্যে দুইজন জারি করেছেন সামরিক শাসন। এরা হলেন জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান আবার রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সেনাপতি-দুটি পদেই একসঙ্গে ছিলেন।

সোমবার বাংলাদেশের অষ্টাদশ সেনাপ্রধান হিসেবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সাবেক প্রধান আজিজ আহমেদকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।

একই বিজ্ঞপ্তিতে আজিজ আহমেদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার কথা জানানো হয়।

আগামী ২৫ জুন বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক অবসরকালীন ছুটিতে গেলে সেদিনই সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন আজিজ আহমেদ। তিনি এর আগে চার বছর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির প্রধান ছিলেন।

বাংলাদেশের জন্মের পর সেনাপ্রধানের পদ মর্যাদা ছিল মেজর জেনারেল। পরে সেটি লেফটেন্যান্ট জেনারেল করা হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর প্রধান একজন জেনারেল।

বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ মেয়াদে চারজন সেনাপ্রধানই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই যুদ্ধের সময় বীরত্বের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই প্রথম সেনাপ্রধান যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি।

এরশাদ সরকারের পতনের পর আরও চারজন মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি হন।

সেনাপ্রধানদের মধ্যে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ ছাড়াও সংসদ সদস্য হয়েছেন কে এম সফিউল্লাহ, নুরুদ্দীন আহমেদ, মাহবুবুর রহমান। প্রথম দুই জন বিএনপি থেকে এবং তৃতীয় জন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন। আর নির্বাচন করে জিততে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে প্রতিরোধ যুদ্ধে নামে সাধারণ জনতার পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, সেই সময়ের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করা সেনা সদস্যরা।

তবে ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের পাঁচ দিন আগে ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক সেনাপ্রধান নিয়োগ হন আতাউল গণি ওসমানী। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরও প্রায় চার মাস এই দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওসমানী। আর পরদিন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দায়িত্বে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিশৃঙ্খলা, দুইবার সেনাপ্রধান হন জিয়া

সফিউল্লাহর মেয়াদেই কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। আর এরপর সেনাপ্রধান পদটি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটে।

জাতির জনককে হত্যার নয় দিন পর অপসারণ করা হয় সে সময়ের মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে।

১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট দেশের তৃতীয় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান জিয়াউর রহমান তিনি ২৪ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

৩ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের পর চতুর্থ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান আরেক মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ। তিনি মাত্র ৫ দিন এ পদে ছিলেন।

৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থাকে নিয়ন্ত্রণ হারান খালেদ মোশাররফ, আবার সেনাপতি হন জিয়াউর রহমান। এরপর তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন প্রায় আড়াই বছর।

১৯৭৮ সালের ২৯ এপ্রিল দেশের ষষ্ঠ সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগি পান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি আট বছরের চেয়েও বেশি এই পদে ছিলেন। ১৯৮৬ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন এরশাদ।

এরশাদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্টে দেশের সপ্তম সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ পান জেনারেল আতিকুর রহমান। তিনি ১৯৯০ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালের ৩১ আগস্ট দেশের অষ্টম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান নুরুদ্দিন খান। তিনি দায়িত্বে ছিলেন চার বছর। ১৯৯৪ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনি।

নুরুদ্দিন খান পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নরসিংদীর একটি আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।

দেশ গণতন্ত্রে ফেরার পর সেনাপ্রধান যারা

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়। আর এরশাদ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের আমলে ১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্টে মাসে দেশের নবম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম। তার মেয়াদ ছিল দুই বছরেরও কম। ১৯৯৬ সালের ১৯ মে পর্যন্ত এ পদে ছিলেন।

১৯৯৬ সালের ২০ মে ১০ম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান মাহবুবুর রহমান। তিনি ১৯৯৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

১৯৯৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০০ সালের ২৩ ডিসেম্বর দেশের ১১তম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

সেনাপ্রধান পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০১ সালে রংপুর সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান।

১২ তম সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তিনি এই পদে ছিলেন ২০০২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত। তিনিও একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধা।

২০০২ সালের ১৬ জুন দেশের ১৩তম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী। তিনি ২০০৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত এ পদে ছিলেন।

১৪ তম সেনা প্রধান জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদ ২০০৫ সালের ১৬ জুন থেকে ২০০৯ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের ১৫ জুন পঞ্চদশ সেনা প্রধানের দায়িত্ব পান আব্দুল মুবীন। তিনি ২০১২ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৬তম সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ২০১২ সালের ২৫ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২২০১৫ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন।

বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৫ সালের ২৫ জুন। আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত তার মেয়াদ আছে।

এতদিন সেনাপ্রধানের মেয়াদ কত দিন ছিল, সেটি নির্দিষ্ট ছিল না। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে এই মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর নির্দিষ্ট করে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়।

ঢাকাটাইমস

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com